জীবন যুদ্ধে হার মানেনি শোভা
ন্যাশনাল ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
প্রতিবন্ধীতা তাকে হার মানাতে পারেনি। অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে সমাজে উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের পাশাপাশি কাজ করছেন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে। অসম্ভবকে সম্ভব করে নিজ হতে গড়ছেন নতুন প্রজন্ম৷ সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় জয় করে ‘ভিত’ গড়ছেন রায়গঞ্জের রাঙাপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। নাম তার শোভা মজুমদার৷
জন্ম থেকে দু’টো হাত অকেজো৷ তাই পড়াশুনা দু’ পা দিয়েই করতে হয়েছে তাকে৷ এরপর স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ৷ কলেজ শেষ করে বসে থাকেন নি তিনি। হাতে তুলে নিয়েছেন মানুষ গড়ার মহান দায়িত্ব। চাকরি নিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে৷ হাত নেই তো কী হয়েছে, পা দিয়েই ব্ল্যাকবোর্ডে সাদা চকখড়ির দাগ কেটে ছাত্র পড়াচ্ছেন ওই গ্রামের মেয়ে শোভা৷ শুধু ছাত্র পড়ানো নয়, ছোটবেলা থেকে বাড়ির সব কাজ করে চলেছেন দু-পা দিয়ে। ভাইয়ের কপালে পায়ের কড়ে আঙ্গুলের ফোঁটা দিয়ে যমদুয়ারে দাগও কেটে চলেছেন অসম্ভবকে জয় করা শোভা৷
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থানার বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাঙ্গাপুকুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শোভা মজুমদার৷ জন্ম থেকেই দু’ হাত অকেজো৷ তার । তাই পায়ের সাহায্যেই ব্ল্যাক বোর্ডে লিখে ছাত্রছাত্রী পড়াচ্ছেন মনের আনন্দে৷ তাঁর এই নজিরবিহীন কাজ দেখে হতবাক স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে অভিভাবকরাও৷
রীতিমতো প্রতিযোগিতায় বসে ২০১০ সালে এই স্কুলের চাকরির সুযোগটি আদায় করে নেন শোভা। ছাত্রছাত্রীরাও শোভা দিদিমনির ক্লাস করার জন্য আগ্রহী। শোভা বললেন, ‘পা দিয়ে পড়াতে আমার কোনও অসুবিধা হয় না৷ আমি খুব ভালভাবে এই কাজ করতে পারি। আমার জীবনের প্রথম থেকে এইভাবে পড়াশোনা করে এসেছি৷ জীবনের সমস্ত পরীক্ষায় সফল হয়েছি পা দিয়ে লিখেই৷ এটাই আমার অভ্যাস৷ তাই কোনও অসুবিধা হয় না। আমি কাজটা করে বরং আনন্দ পাই। একজন সাধারণ শিক্ষকের মতোই স্কুলে ক্লাস নিতে পারি আমি৷ হাত অকেজো তো কী হয়েছে? পা দিয়েই ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে ছাত্রদের পড়াই৷’
ওই স্কুলের শোভাদেবীর সহ-শিক্ষক পরিতোষ চন্দ্র রায় এবং পিংকি দাস বললেন, ‘শোভা দিদিমনির ক্লাস করতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রচন্ড আগ্রহ দেখা যায়। শোভা দিদিমনিও যথাসাধ্য চেষ্টা করেন ঠিকমতো ক্লাস করানোর। আমরা শোভা দিদিমনির এই ভূমিকা দেখে খুশি৷’ শোভার বাবা মলিনচন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘জন্ম থেকে শোভার হাত দু’টি অকেজো থাকায় আমাদের ধারণা ছিল, এই প্রতিবন্ধী মেয়ে জীবনে কিছু করতে পারবে না। কিন্তু, আমাদের সমস্ত ধারণা সে ভেঙে দিয়েছে৷’ তিনি আরও বললেন, আমার তিন সন্তানদের মধ্যে শোভাই একমাত্র এম এ পাশ করেছে। তাও পা দিয়ে জীবনের সব ক’টি পরীক্ষা দিয়েছে। আমি ওকে নিয়ে গর্ব করি।”
শোভার মা শান্তিদেবী বলেন, ‘শোভা স্কুল-কলেজে পড়ার সময় আমাকে নিয়মিত সাংসারিক কাজে সাহায্য করত। পা দিয়েই তরকারি কাটা, মশলা বাটার মতো কাজগুলি অনায়াসে করত।’ শোভা অবশ্য বলেন, মানসিক জোর থাকলে মানুষ সব কিছুই করতে পারে, আমি নিজেই তার প্রমান। তাঁর কথায়, ‘মানসিক জোরে আমি সমস্ত বাধা পেরোতে পেরেছি। প্রতিবন্ধীতা আমাকে রুখতে পারে নি। প্রতিবন্ধী ভাইবোনদের উদ্দেশ্যে আমার শুধু একটা কথাই বলার আছে যে, কখনও মানসিক জোর হারিয়ে ফেল না। মানসিক জোর থাকলে সাফল্য তোমারও আসবে৷’
প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ